দুধরাজ : একটি স্বর্গীয় পাখি

 



দুধরাজ একটি মধ্য এশিয়ার স্থানীয় পাখি যেটি মহাদেশটির সর্বত্রই ছড়িয়ে রয়েছে। তবে পাখিটিকে মূলত মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বেশি দেখা যায়। পাখিটির ইংরেজি নাম হল প্যারাডাইজ ফ্লাইক্যাচার৷

বৈজ্ঞানিক নাম Terpsiphone paradisi । তবে এরা সাহেব বুলবুলি, শাহ-বুলবুল নামেও সুপরিচিত৷ দেখতে অনেকটা বুলবুলির মতো হলেও এরা মোটেও বুলবুলি পাখির সমগোত্রীয় নয়৷ 

পুরুষ দুধরাজ পাখির রয়েছে লম্বা লেজের পালক। এদের পালকের রঙ লালচে খয়েরি হয়ে থাকে আর কিছু কিছু পাখির রঙ কালচে লাল হয়ে থাকে। কিছু পাখির পালকের রঙ আবার সাদাও হয়ে থাকে। স্ত্রী পাখিদের লেজ ছোট আর পালকের রঙ কালো ও লালচে খয়েরি।পুরুষ পাখির জীবনে দুটি পর্ব রয়েছে। এগুলো হল খয়েরি পর্ব ও সাদা পর্ব। সাধারণত দু থেকে তিন বছর পর্যন্ত এদের খয়েরি জীবন চলে। অর্থাৎ এ সময় এদের পালকের রঙ থাকে খয়েরি। আর এরপর এদের পালকের রঙ ধীরে ধীরে সাদা হতে থাকে ও একসময় সম্পূর্ণ সাদা হয়ে যায়। পাখিগুলোকে যে কোন অবস্থাতেই দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। তবে পুরুষ পাখির লম্বা লেজের পালক একে যেন স্বর্গীয় রূপ দেয়। 

 

 

পূর্ণবয়স্ক দুধরাজ পাখি প্রায় ১৯-২২ সেন্টিমিটার  (৭.৫ - ৮.৭ ইঞ্চি) লম্বা হয়ে থাকে। এদের মাথা চকচকে কালো বর্ণের হয়। মাথার শীর্ষে থাকে বুলবুলি পাখির মত চোখা ঝুঁটি। ঠোঁটের রঙ চকচকে কালো ও এটি বেশ শক্ত। কমবয়সী পুরুষ পাখি দেখতে স্ত্রী পাখির মতই হয় তবে এদের গলার রঙ কালো হয়ে থাকে। তাছাড়া চোখের চারপাশে নীল রঙের বলয় দেখা যায় এদের। পূর্ণবয়স্ক পুরুষ দৈর্ঘ্যে প্রায় ২৪ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয় আর এদের লেজের পালক দুটির দৈর্ঘ্য হয় ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত। সাধারণত এই লম্বা লেজের অধিকারী হতে পুরুষ পাখিদের তিন বছর মত সময় অতিবাহিত করতে হয়। 

 


 

দুধরাজ পাখিরা ঘন বন-জঙ্গলে বাস করে। এরা পরিযায়ী এবং শীতকাল কাটায় ট্রপিক্যাল এশিয়ায়। এরা বেশ কোলাহলপ্রিয় পাখি। এরা তীক্ষ্ণ স্বরে ডাকে। এদের পা বেশ ছোট হওয়ায় এরা গাছে বিশেষ কায়দায় বসতে পারে। এরা পতঙ্গভুক এবং উড়ন্ত অবস্থাতেই পতঙ্গ ধরতে সক্ষম। বিকেল বেলা এরা আশেপাশের ছোট পুকুর কিংবা জমে থাকা পানিতে ডাইভ দিয়ে স্নান করে। 

 


 

এদের প্রজনন মৌসুম সাধারণত মে মাস হতে জুলাই মাস পর্যন্ত হয়ে থাকে। এরা একগামি পাখি ও বাসা তৈরিতে পুরুষ-স্ত্রী উভয় পাখিই অংশ নেয়। স্ত্রী পাখি ডিম পাড়ার পর পুরুষ ও স্ত্রী পাখি পালাক্রমে সেই ডিমে তা দিয়ে থাকে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলে উভয় পাখি বাচ্চাদের খাওয়ানো এবং লালন পালনে সমান ভূমিকা রাখে।  গাছের শাখায় শুকনো ঘাস,ডালপালা ও মাকড়সার জালের সমন্বয়ে এরা বাসা বানায়। সুন্দর ছোট কাপের মত দেখতে বাসায় এরা ৩ থেকে ৪ টি ডিম পাড়ে। এদের বাসা বেশ পরিষ্কার হয়। ডিমে তা দেয়া চলতে থাকে প্রায় ৯-১২ দিন। এরা অনেক সময় প্রজননরত ফিঙ্গে পাখির জোড়ার আশে পাশে বাসা তৈরি করে । এতে করে এরা শিকারির হাত থেকে সুরক্ষিত থাকে। প্রায় ২১ থেকে ২৩ দিনের মাথায় ডিম ফুটে ছানা বের হয়। মজার ব্যাপার হল অনেক সময় ভিন্ন প্রজাতির পাখি যেমন বাবুনাই পাখিদেরও এদের ছানাদের খাওয়াতে দেখা যায়। 


 

সাধারণত পাখিটির সবগুলো ডিম ফুটে না। আর যেগুলো ডিম ফুটে সেগুলোর সব ছানারা বেশিদিন বাঁচেনা। বাচ্চার মৃত্যুর হার অনেক বেশি। একারণেই এদের সংখ্যা এত কম। তবে সাদা রঙের দুধরাজ পাখি যখন আকাশে উড়ে বেড়ায় তখন এদের দেখতে অদ্ভুত সুন্দর লাগে। মনে হয় যেন স্বর্গের পাখি। আইইউসিএন (IUCN) এর তথ্যমতে পাখিটি এখনো আশঙ্কামুক্ত রয়েছে।