বিষধর সাপের কামড় চেনার উপায়


সাধারণত বিশধর সাপে কামড় দিলে তা বোঝার তিনটি উপায় রয়েছে। এগুলো হল সাপটিকে চেনা, বিষদাঁতের ক্ষতচিহ্ন দেখে এবং বিষক্রিয়ায় সৃষ্ট লক্ষণ থেকে।

বাংলাদেশে মানুষকে মারতে সক্ষম এমন সাপের প্রজাতি রয়েছে ৬ টি। এগুলো স্থলচর এবং প্রায়শই মানুষকে দংশন করে থাকে। আবার অনেক প্রজাতির বিষধর সাপ সমুদ্রে বসবাস করে। এ সাপগুলো সচরাচর মানুষের সংস্পর্শে আসেনা। আর এ সাপগুলোর কামড়ের এন্টিভেনম এদেশে নেই। তবে কিছু মাঝারি বিষাক্ত সাপও রয়েছে যাদের কামড় ততটা মারাত্মক নয়। আর কিছু অত্যন্ত দুর্লভ প্রজাতির বিষধর সাপও রয়েছে। তবে এগুলো না চিনলেও চলবে। তো চলুন এই ৬ প্রজাতির কমন বিষধর সাপগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক।

 

শঙ্খচূড় বা কিং কোবরাঃ

 

সাপটি পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা বিষধর সাপ। তবে মজার কথা হল এটি দেখতে গোখরা সাপের মত হলেও আদতে কিন্তু এটি গোখরা এর কোনো প্রজাতি নয়। এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রজাতির সাপ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Ophiophagus hannah । সাপটির দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ৫.৬ মিটার (১৮.৫ ফুট) পর্যন্ত হতে পারে। এটি মূলত সম্পূর্ণ দক্ষিণ এশিয়ার বনাঞ্চল জুড়েই দেখা যায়। এদেরও গোখরার মত ফণা রয়েছে। তাই নামও হয়েছে কিং কোবরা। এদের ফণার পেছনে গোখরা সাপের ন্যায় চশমার মত কোনো নকশা নেই। 

এ সাপটি সাধারণত অন্য সাপ খেয়ে থাকে। এদের বিষ নিউরোটক্সিক। অর্থাৎ এ বিষ স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে। এ সাপটি বাংলাদেশে কেবল সুন্দরবনেই পাওয়া যায়। তবে সম্প্রতি সিলেটের সাতছড়িতেও দেখা গিয়েছে সাপটিকে। তার মানে এদেশের গহিন বনে জঙ্গলে সাপটি অত্যন্ত সীমিত সংখ্যায় এখনও টিকে আছে। 

এদের শরীর কালো ও জলপাই বর্ণের। সাথে রয়েছে হলদে সাদা ডোরাকাটা দাগ। এদের বিশাল লম্বা দেহ ও নকশাহীন ফণার জন্য খুব সহজেই এদের চেনা যায়। এ সাপটি জঙ্গলে বসবাস করে। সহজে লোকালয়ে আসে না। তাই এ সাপের কামড়ের খবরও পাওয়া যায়না খুব একটা।

 গোখরা / কেউটে সাপঃ

 

এ সাপটি খুবই পরিচিত। এদের ফণার পেছনে রয়েছে এক চোখা চশমার মত নকশা। তাই ইংরেজিতে দের নাম মনোকন্ড গোখরা। এর বিষও নিউরোটীক্সিন। অর্থাৎ স্নায়ুতন্ত্রে কাজ করে এ বিষ। এ সাপটি ইঁদুরখেকো। মানব বসতির আশেপাশে যেখানে ইঁদুর থাকে সেখানেই দেখা মিলে এদের। সাড়া বিশ্বেই এ সাপ কম বেশে দেখা যায়। আমাদের দেশে সবথেকে বেশি মানুষ মারা যায় এ সাপের দংশনে। 

 গোমা সাপ/ খইয়া গোখরা/ খরিশ গোখরাঃ

 


এ সাপটিও একটি গোখরা সাপের প্রজাতি। তবে এদের ফণার পেছেনে দুচোখা চখমার মত নকশা থাকে বলে এদের কে স্পেক্টেকলড কোবরাও বলা হয়ে থাকে। সাপুড়েদের কাছে এদের দেখা যায় বেশি।  এরা শুষ্ক স্থানে থাকতে বেশে পছন্দ করে। সাধারণত বাড়ীর আশেপাশে পরিত্যক্ত ইটের পাঁজা, কোনো পুরোনো বাড়ির ধ্বংসাবশেষ, ইঁদুরের গর্ত কিংবা গাছের কোটরে এরা বসতি গড়ে। এরা মূলত ভোরবেলা ও সন্ধ্যাবেলা বেশি সক্রিয় থাকে। 

কালাচ/ ঘামচাটা/ কমন ক্রেইটঃ

 


এ সাপটি গোখরা থেকেও বিষধর। লোককথা প্রচলিত আছে যে মানুষের ঘামের গন্ধে এটি বিছানায় উঠে আসে। তবে আসলে এ সাপ গভীর রাতে ব্যাঙ ও ইঁদুর ধরতে বের হয়। আর এরা দেয়াল বাইতেও বেশ দক্ষ। এভাবেই এরা নিমিষেই বিছানায় উঠে আসে। আর মানুষের নড়াচড়ায় ভয় পেয়ে কামড় দিয়ে দেয়। কামড় হয় খুবই আস্তে এবং বেশিরভাগ মানুষই ঘুমের ঘোরে টের পায়না। তাই বিষাক্ত নিউরোটক্সিন বিষ ঘুমের ঘোরেই মানুষের প্রাণ নিয়ে নেয়।  

আবার এই সাপের মতই দেখতে আরেকটি নিরীহ সাপ রয়েছে। যার নাম উলফ স্নেক/ ঘরগিন্নি সাপ। তবে দুটি সাপকে আলাদা করে চেনার উপায় রয়েছে। কালাচের মাথাটি নিকষ কালো। অন্যদিকে ঘরগিন্নি সাপের মাথার পেছনে রয়েছে সাদা রঙের ডোরা দাগ। আর মানুষ কালাচ সন্দেহ করে এই সাপকেই মারে বেশি। 

শাখামুটি/ ব্যান্ডেড ক্রেইটঃ


 এ সাপটি বাংলাদেশের অন্যতম মারাত্মক বিষাক্ত সাপ হলেও আদতে এটি বেশ উপকারী একটি সাপ। কারণ এ সাপটি অন্যান্য বিষধর সাপ যেমন কেউটে ও কালাচকে খেয়ে থাকে। তাই এ সাপ যে স্থানে থাকে অন্যান্য বিষধর সাপ সেখানে থাকেনা। সাপটি সহজে মানুষকে কামড়ায় না। এমনকি ভয় পেলেও এটি কামড় দেয়না। তাই এ সাপের কামড়ে মৃত্যুর সংখ্যা নেই বললেই চলে। 

রাসেল ভাইপার/ চন্দ্র বোড়াঃ


 এ সাপটিকে প্রথম দেখায় অনেকে অজগর মনে করে ভুল করে। এদের দেহের রঙ বাদামি। দেহ বেশ মোটা। এরা উত্তেজিত হলে শরীরের উপরের ১/৩ অংশ উঁচু করে রাখে এবং উচ্চস্বরে হিসহিস শব্দ করতে থাকে। এ সাপের বিষ হেমোটক্সিক। অর্থাৎ এ বিষ রক্তের ওপর কাজ করে। এদের বিষ শরীরের টিস্যু গলিয়ে দেয়। এরা জঙ্গলের সাপ। জঙ্গলের মাটিতে পড়া শুকনো পাতার সাথে সহজেই মিশে যেতে পারে। এরা বেশ ধীরগতির। মানুষের বাসা বাড়ীতে কখনই ঢুকে পড়েনা। সাধারণত যেসব মানুষ এদের কামড় খায় মূলত তারা জঙ্গলে ঘোরাঘুরি করার সময় এর ওপর ভুল করে পা পাড়া দেয়। আর মানুষ দেখলে এরা কামড়ানোর জন্য তাড়া করে ধেয়ে আসে এটাও সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কথা। কোনো সাপই আঘাতপ্রাপ্ত কিংবা ভয় না পেলে কামড়াতে আসেনা। 

বাংলাদেশে সাধারণত এ ৬ প্রজাতির সাপই  চোখে পড়ে যার মধ্যে কয়েকটি সাপ একেবারেই কামড় দেয়না। আবার সব বিষধর সাপ অনেক সময় কামড় দিলে বিষও ঢালে না। একে বলে ড্রাই বাইট বা শুকনা কামড়। অনেক সময় বিষাক্ত সাপের ছোবল খাওয়া মানুষ হাসপাতালে আসে এবং দেখা যায় তাদের হাতে-পায়ে বিষ দাঁতের সুস্পষ্ট চিহ্ন থাকা স্বত্বেও শরীরে বিশের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। যেটি শুকনো কামড়ের লক্ষণ। 

সাপ কামড় দেয়ার সময় যদি সাপটিকে দেখা না যায় তবে কামড়ে সৃষ্ট ক্ষতস্থান দেখেও কোন সাপ কামড় দিয়েছে তা জানা যায়। বিষাক্ত সাপ কামড় দিলে ক্ষতস্থানে দুটি বিষ দাঁতের চিহ্ন থাকবে। তবে সাপে কামড় দিলে তা বিষাক্ত কিংবা নির্বিষ এ নিয়ে চিন্তা বেশি করে সময়নষ্ট করা উচিত না। যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে যেতে হবে। যদি ডাক্তারকে সাপের নাম বলতে পারেন তাহলে দ্রুত চিকিৎসা নেয়া সম্ভব।  

বিষাক্ত সাপ যাতে সহজেই চিনতে পারেন এর জন্যই কিছু ছবি দেয়া হয়েছে উপরে। তাই অযথা নিরীহ ও উপকারী সাপ হত্যা না করে ছবিতে দেখানো বিষধর সাপগুলো থেকে সাবধান হলেই চলবে। সাপ কামড়ালে কি করবেন বা কি করবেন না এটা জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন।