খুনে পাখি ক্যাসোয়ারী


 

যদি বলি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাখি কোনটি? সবাই এক কথায় উত্তর দিবে 'উটপাখি'। উত্তর সঠিক। তবে অধিকাংশ মানুষই পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম পাখি ক্যাসোয়ারী

সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়। পৃথিবীর বৃহত্তম পাখিসমূহের মধ্যে উটপাখি বা অস্ট্রিচ প্রথম, দ্বিতীয় হল এমু আর তিন নম্বরে আছে ক্যাসোয়ারী। বিপন্ন এই পাখিটির নামকরণ হয়েছে  পাপুয়া শব্দ 'ক্যাসু' যার অর্থ শিং ওয়ালা আর 'ওয়েরী' যার অর্থ মাথা। আর এই নামটি এসেছে তাদের মস্তকে অবস্থিত চোখে পরার মত সেই শিরস্ত্রাণটি থেকে।  আর এ পাখিটিকেই বিশ্বের সবচেয়ে বিপদজনক ও খুনে পাখি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

অনেকে বলতে পারেন এ পাখিটি প্রাগৈতিহাসিক টার্কির মত দেখতে কিন্তু সত্য কথা হল এটিকে ডাইনোসরদের বংশধর বলা হয়। দেখতে কিছুটা  উটপাখি ও টার্কি মোরগের মত। দেহের গঠন বেশ সুন্দর ও রঙ্গিন। পালকের গঠনও অন্যান্য পাখিদের থেকে আলাদা। এদের নীলচে দেহের ওপর আবৃত কালো পালক  দেখলেই মনের অজান্তেই আপনার ডাইনোসরের কথা মনে হবে। আর ডাইনোসরদের খুব কাছাকাছি বংশধর বলেই এ পাখিটি বিশ্বের সবচেয়ে বিপদজনক পাখি। 

বিশ্বের বৃহত্তম অন্যসব পাখিদের মতই ক্যাসোয়ারী উড়তে পারে না। কারণ এদের বুকের হাড় ও পাঁজরের গঠন এদের উড়তে সাহায্য করেনা। আর উড়তে সাহায্যকারী মাংসপেশিও এদের ডানায় অনুপস্থিত। এরা উড়তে না পারলে কি হবে , এক লাফে দুই মিটার অতিক্রম করতে সক্ষম এ পাখিটির দৌড়ের গতি ঘণ্টায় প্রায় ৫০ কিলোমিটার। তাই ফ্লাইট করতে না পারলেও এরা ফাইট করতে ভালই পারদর্শী।

 


 

ক্যাসোয়ারী এদের মাথার হেলমেট টাইপ শিং ও ধারালো শক্তিশালী পায়ের নখর ব্যবহার করে আত্মরক্ষা করে থাকে। জঙ্গলে চলে রাজকীয় স্টাইলে।  মাথার শিংটি উচ্চতায় প্রায় ১৫ সেমি আর দৈর্ঘ্যে প্রায় ১৭ সেমি। এটি লড়াই করার সময় ক্যাসোয়ারীর মাথায় আঘাত পাওয়া সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।লড়াই করার সময় ক্যাসোয়ারী নিজেকে যতটা সম্ভব লম্বা ও বিশালাকারে প্রদর্শন করে , একই সাথে ডানা ঝপটিয়ে,মাথা নিচু করে হেলিয়ে দুলিয়ে বিখ্যাত সেই শিরস্ত্রাণটি প্রদর্শন করিয়ে সমর নৃত্য করে। 

মাথার শিঙটি ছাড়াও এদের রয়েছে ১২ সেন্টিমিটারের খঞ্জরের ন্যায় নখর। এটি মারাত্মক জখম করতে সক্ষম। এটা খুব সহজেই একটা বড়সড় কুকুরকেও মেরে ফেলতে পারে। 

তবে পাখিটির এত কুখ্যাতি স্বত্বেও এরা কখনই বিনা কারণে যেচে পড়ে আক্রমণ করবে না। এরা ভীষণ লাজুক স্বভাবের এবং যথাসম্ভব লড়াই এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করে। তবে পাখিটি এর নিজের এলাকা ও ছানাদের প্রতি বেশ রক্ষণশীল। মানুষের ওপর ক্যাসোয়ারীর আক্রমণ হয়ে থাকে যার জন্য শুধুমাত্র মানুষই দায়ী। প্রতিবছর প্রায় ২০০ টির মত ক্যাসোয়ারীর আক্রমণের খবর পাওয়া যায়। যার মধ্যে ৭০% ক্ষেত্রেই দায়ী থাকে মানুষ। তারা ক্যাসোয়ারীর কাছে গিয়ে তাদের খাওয়ানোর চেষ্টা করে। আর ক্যাসোয়ারীও সেটিকে থ্রেট মনে করে আত্মরক্ষার্থে আক্রমণ করে বসে। যদিও প্রতিবছর শত শত মানুষ নিজেদের ভুলে ক্যাসোয়ারীর আক্রমণের শিকার হয় তবুও শুধুমাত্র ১৯২৬ সালে ক্যাসোয়ারীর আক্রমণে মৃত্যুর ঘটনা জানা গেছে। 

প্রায় ১.৫ - ২ মিটার লম্বা এবং ওজনে ১১০ পাউন্ডের ক্যাসোয়ারী পাখি অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে ভারি পাখি। যদিও পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী পাখি পুরুষ পাখির চেয়ে বেশি বড় ও আগ্রাসী তবুও উভয়ই সমান আনপ্রেডিক্টেবল পাখি।

এ পাখিটির প্রাপ্তিস্থান হল অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাংশের কুইন্সল্যান্ডের রেইনফরেস্ট।  ক্যাসোয়ারীরা নিরামিষভোজী এবং এরা মূলত ফলমূল খেয়ে থাকে। অনেক ফলের বীজ হজম না হয়ে এদের বিষ্ঠার মাধ্যমে জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। আর এভাবে এরা জঙ্গলে উদ্ভিদের বংশবিস্তারেও সাহায্য করে। তাই ক্যাসোয়ারীকে রেইনফরেস্টের প্রাকৃতিক মালীও বলা হয়।