সাপের বিষের প্রতিষেধক তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশেই

 

 


বাংলাদেশের পাঁচটি বিষধর সাপ নিয়ে শুরু হয়েছে সাপের কামড়ের প্রতিষেধক তথা অ্যান্টিভেনম তৈরির  প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ। প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তত্ত্বাবধানে পাঁচটি সাপকে এ উদ্দেশ্যে লালন-পালন করা হচ্ছে। এ সাপগুলোর বৃদ্ধি, সুস্থতাসহ অন্যান্য বিষয় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে গবেষকেরা বিষ সংগ্রহের উপযোগী হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন ।  প্রথমবারের মতো দেশে অ্যান্টিভেনম তৈরির লক্ষ্যে এই প্রকল্পে খরচ হয়েছে প্রায় আট কোটি টাকা।

আমাদের বাংলাদেশে প্রতিবছরই অনেক মানুষ সাপের দংশনে অকালে মারা যায়। এ ব্যাপারে মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য হলেও বিভিন্ন গবেষণায় যে পরিসংখ্যান পাওয়া যায় তাতে রয়েছে গড়মিল। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতি বছর এদেশে সাপের কামড়ে মারা যায় প্রায় ৬ হাজার ৪১ জন। সাপ কামড়ানোর পর ৮৬ শতাংশ মানুষই শরণাপন্ন হয় ওঝার কাছে। মাত্র ৩ শতাংশ যায় চিকিৎসকের কাছে। বাংলাদেশে সাপের কামড়ের চিকিৎসায় এখন যেসব অ্যান্টিভেনম বা প্রতিষেধক প্রয়োগ করা হয়, তা আসে ভারতের তামিলনাড়ু থেকে ।

 

 

 


প্রকল্প সূত্র অনুযায়ী , পরীক্ষামূলক অ্যান্টিভেনম তৈরির জন্য বিষ সংগ্রহে প্রায় ১০০টি সাপ নিয়ে গবেষণা করার প্রাথমিক লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে। এসব বিষধর সাপের মধ্যে  রয়েছে ২০টি কমন ক্রেইট বা কেউটে (bungaruscaeruleus), ১০টি গ্রেটার ব্ল্যাক ক্রেইট , ২০টি ওয়ালস ক্রেইট (bungaruswalli),(bungarus niger),  ৫টি লেসার ব্ল্যাক ক্রেইট ,  ৫টি ব্র্যান্ডেড ক্রেইট (bungarus fasciatus),(bungaruslividus), ২০টি মনোক্লেড কোবরা (najakaouthia) ও ২০টি স্পেকটেকলড কোবরা  (naja naja)। সবমিলে পাঁচটি সাপ এখন পর্যন্ত সংগ্রহ করা হলেও বিষ বা ভেনম সংগ্রহ এখনো শুরু হয়নি।

 

প্রকল্পটীতে আর্থিক সহায়তা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রকল্পটির মেয়াদকাল পাঁচ বছর।  এতে যুক্ত রয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, টক্সিকোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ এবং জার্মানির গ্যোটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ টিম। জার্মানি থেকে জীববিজ্ঞানীরা এদেশে এসে নিজেকে নিরাপদ রেখে কিভাবে বিষধর সাপ ধরতে হয় ও সাপগুলোকে খাইয়ে সুস্থ অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখতে হয় সেজন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে গেছেন।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুযায়ী , সাপের কামড়ের রোগীর চিকিৎসার জন্য স্থানীয় সাপ থেকে যদি অ্যান্টিভেনম তৈরি হয় তাহলে তা সবচেয়ে কার্যকর হয়। এর প্রধান কারণ, বিভিন্ন দেশের সাপের প্রকৃতি বিভিন্ন রকম। ভারতে যেসব সাপ থেকে বিষ সংগ্রহ করা হয়, সেগুলোর মাত্র ২০ শতাংশই মেলে বাংলাদেশের সাপের সঙ্গে । অথচ বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশের সাপের কামড়ের রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে ভারতের অ্যান্টিভেনম দিয়েই ।

 

 

 

সাধারণত সাপের বিষ শরীরে তিনভাবে  প্রভাব ফেলে। হেমোটক্সিন হলে রক্ত দূষিত হয়, মায়োটক্সিন  মাংসপেশিকে করে দেয় অকার্যকর এবং নিউরোটক্সিন স্নায়ু ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বিনষ্ট করে।

 

পরীক্ষামূলকভাবে অ্যান্টিভেনম তৈরির লক্ষ্যে পাঁচ বছরের এই প্রকল্পের জন্য আট কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ রয়েছে জানা যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন-কমিউনেকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মো. রাজীব আল-আমিনের তথ্যমতে। গত বছরের জুলাই মাস থেকে আরম্ভ হয়েছে প্রকল্পের কাজ । সাপ সংগ্রহসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজে ইতিমধ্যে খরচ হয়েছে ৯৫ লাখ টাকা । তিনি বলেন, সাপের কামড়ের মত বিষয়টিকে দেশে অবহেলিত জনস্বাস্থ্য হিসেবে ভাবা হয়। এদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বছরে ছয় হাজার অ্যান্টিভেনম পেয়ে থাকে ডব্লিউএইচওর কাছ থেকে। এরপর জেলা সদরে অ্যান্টভেনম বা প্রতিষেধক সরবরাহ করা হয় সিভিল সার্জনের কাছ থেকে চাহিদা অনুযায়ী। সাপ দংশনের পর প্রতি রোগীকে ১০টি করে অ্যান্টিভেনম দেয়া লাগে।

 

চাহিদার তুলনায় এদেশে সরকারিভাবে অ্যান্টিভেনমের সরবরাহ বেশ অপ্রতুল। সরকারি হাসপাতালে বিনা মূল্যে সরবরাহ করার নিয়ম থাকলেও অনেক রোগী তা পান না। তাদের চড়া দামে কিনে নিতে হয় হাসপাতালের বাইরে থেকে ।

 

 

 

গত ২৭ মে গোখরো সাপের কামড় খেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন গাজীপুরের সদর উপজেলার পুবাইল ইউনিয়নের খোরাইদ গ্রামের বাসিন্দা মো. খোকন (৪৫) । তিনি আক্ষেপ করে জানান, হাসপাতাল থেকে অ্যান্টিভেনম বিনা মূল্যে দেওয়ার কথা থাকলেও তাঁকে ১০টি ইনজেকশন কিনতে হয়েছে ১১ হাজার টাকা দিয়ে ।


যেভাবে সংগ্রহ করা হবে  সাপের বিষ

 
 

 

অ্যান্টিভেনম তৈরি প্রকল্পের মূল দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষের তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তত্ত্বাবধানে বিষ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে রাখা হয়েছে মোট পাঁচটি বিষধর সাপ। এর মধ্যে তিনটি কোবরা, একটি কেউটে এবং একটি সবুজ পিট ভাইপার। মূলত বিষ সংগ্রহের উপযোগী করে তোলার জন্যই পালন করা হচ্ছে এইসব সাপ । বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ভেনম স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী বিষ সংগ্রহ, ভেনম ক্যারেকটারাইজেশন অর্থাৎ প্রাপ্ত বিষে কোন ধরনের প্রোটিন উপাদান আছে তা বের করা ও যেসব দেশে প্রচলিত অ্যান্টিভেনমগুলো সেগুলোকে  কতটা নিউট্রলাইজ করতে পারে তা পরীক্ষা করা। এসব প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে শেষ করে পরীক্ষামূলক অ্যান্টিভেনম তৈরি করে তা ঘোড়াসহ বিভিন্ন প্রাণীর ওপর প্রয়োগ করা হবে। আর সেটায় সফলতা পেলেই তা প্রয়োগ করা হবে মানবদেহে ।

 

 

 

অনিরুদ্ধ ঘোষের ভাষ্যমতে, ডব্লিউএইচওর নির্দেশনা অনুযায়ী যে দেশে যে ধরনের সাপ থাকে, সেই ধরনের সাপের বিষ থেকে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা হয়।  আর এতে সাপের কামড়ের রোগীর ক্ষেত্রে ওই ওষুধ শতভাগ কাজ করার নিশ্চয়তা পাওয়া যায়। অন্য দেশের অ্যান্টিভেনম এই দেশে যে শতভাগ কার্যকর হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তিনি আরোও জানান,তারা সাপুড়ের কাছ থেকে নয় বরং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা বিষধর সাপ নিজেরাই ধরে দেখভাল করছেন। এক্ষেত্রে  বিষ সংগ্রহ করা হবে সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে।  বিষ সংগ্রহের জন্য রাখা পাঁচটি সাপ এখনো বিষ উৎপাদনে  উপযোগী হয়নি। বিষ সংগ্রহ করার জন্য সাপের নির্দিষ্ট কোনো বয়স আদৌ দরকার কি না, সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘যদিও সুনির্দিষ্ট কোনো বয়সের তেমন প্রয়োজন হয় না তবে ছোট সাপ থেকে বিষ সংগ্রহ করার মানা রয়েছে। কারণ বিষ সংগ্রহ করার ক্ষেত্রেও  কিছু প্রয়োজনীয় ধাপ অনুসরণ করতে হয়।’

 

 

 

 

অধ্যাপক ডা. এম আবুল ফয়েজ এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি  বলেন, বাংলাদেশে যে অ্যান্টিভেনমগুলো রয়েছে, তা মূলত আসে ভারত থেকে। এসব অ্যান্টিভেনম তৈরিতে নিয়োজিত রয়েছে ভারতের ছয়টি প্রতিষ্ঠান। দেশের একটি ওষুধ প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ ভারতের প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বাল্ক ভেনম আমদানি করে এবং তা  প্রক্রিয়াজাত করে অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন আকারে বিক্রি করে । ভারতে গোখরো, কেউটে, চন্দ্রবোড়া ও স স্কেলড ভাইপার এই চার ধরনের সাপ থেকেই মূলত বিষ  সংগ্রহ করা হয়। এই সাপগুলোর সবগুলোই যদিও বাংলাদেশে নেই। আবার কিছু প্রজাতির সাপ ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি রয়েছে।

 

এম আবুল ফয়েজের ভাষ্যমতে, ভারতে এক প্রজাতির গোখরা (যেগুলো ফণা তুললে পেছনে দুটো চশমার ন্যায় বলয় দেখা যায়, এগুলোকে বলা হয় স্পেকটেকলড কোবরা বা চশমা গোখরা) সাপ পাওয়া যায়। এটিসহ বাংলাদেশে আরেক ধরনের গোখরো সাপও রয়েছে। এই ধরনের গোখরো সাপগুলো ফণা তুললে পেছনে একটি বলয় দেখা যায়(মনোক্লেড কোবরা)। আবার ভারতে কেবল একধরনের কেউটে সাপ রয়েছে। আর বাংলাদেশে রয়েছে চার ধরনের কেউটে সাপ । চন্দ্রবোড়া সাপের আধিক্য ভারতে বেশি হলেও বাংলাদেশে নিতান্তই কম। অপরদিকে স স্কেলড সাপ তো বাংলাদেশে একেবারেই নেই।
 

 

তাই বলা যায় অ্যান্টিভেনম তৈরির জন্য ভারত থেকে যেসব বিষ আসে তার সবগুলোই বাংলাদেশের জন্য কার্যকর নয়। অথচ এদেশে যখন বিষ আসে, তখন তা আলাদা আলাদাভাবে আসেনা সেগুলো আসে  সম্মিলিতভাবে । আবার কিছু বিষ বাংলাদেশের জন্য অপ্রয়োজনীয়। তিনি বলেন যে অ্যান্টিভেনম তৈরির কাজটি এখন রয়েছে একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে আর এটা বেশ দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। প্রথম ধাপে হয় ভেনম স্ট্যান্ডার্ড নিশ্চিতকরণ।  কেননা অ্যান্টিভেনম তৈরির পূর্বে অবশ্যই ভেনম স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করা প্রয়োজন। যদি পাঁচ বছরে পরীক্ষামূলক অ্যান্টিভেনম তৈরি করা যায় তাহলে বিদেশি প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্তভাবে বাণিজ্যিকভাবেই দেশেই সম্ভব হবে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা ।

 

 

 

মো. রোবেদ আমিন সাপের দংশন বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থিসিস করেছেন । তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এ ব্যাপারে তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, যখন সাপের কামড়ে আক্রান্ত রোগীরা আসে তখন প্রথমেই নিশ্চিত হতে হয় যে তাকে কোন ধরনের সাপ কামড়েছে। কখনো কখনো সাপের ছবি দেখিয়ে রোগীর কাছ থেকে নিশ্চিত হতে হয়। তাছাড়া রোগীর ওপর বিষের প্রভাবও লক্ষ করা হয়। যেমন: গোখরা  সাপ কামড়ালে নিউরোটক্সিন বিষ ঢুকে যায় ফলে কামড় দেয়া স্থানটি ফুলে যায়। ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যেতে থাকে রোগীর চোখ । সবুজ সাপ দংশন করলে স্থানটি ফুলে যায় ও রক্ত ঝরতে থাকে। চন্দ্রবোড়া কামড়ালে এসব লক্ষণও দেখা যায় , পাশাপাশি রোগীর প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। আর কেউটের দংশনে ঠিক গোখরার মতাই নিউরোটক্সিন বিষ শরীরে প্রবেশ করে ও অনুরূপ লক্ষণ দেখা যায়।

 

 

 

তিনি আরোও বলেন যে  সাপের কামড়ের রোগীদের ক্ষেত্রে একটা প্রবণতা দেখা যায় সেটি হল সাপ কামড় দেওয়ার সাথেসাথেই তাঁদের হাত-পা রশি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে ফেলা হয়। অনেকে এতই শক্ত করে বাঁধেন যে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে রক্তসঞ্চালন ব্যাহত হয়ে গ্যাংগ্রিনও হয়ে যায় অনেকের। এত শক্ত করে বাঁধার মোটেও কোনো প্রয়োজন নেই। শুধু লক্ষ রাখতে হবে আক্রান্ত ব্যাক্তির হাত বা পা যেন নড়াচড়া না করা হয়। সে ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে হাত বা পায়ের দুই পাশে কাঠের টুকরো কাপড় দিয়ে আলতো করে বেঁধে শীঘ্রই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

 

রোবেদ আমিন জানান, আমাদের দেশে রয়েছে ৮২ প্রজাতির সাপ। অনেকের মতে ১০০ প্রজাতির সাপ রয়েছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে বিষধর সাপ রয়েছে ছয় ধরনের। বাদ বাকি সাপগুলো কামড় দিলেও তেমন কিছুই হয় না। আর ঠিক এই সুযোগটাই লুফে নেন ওঝারা। আর একারণেই দেশে সাপের কামড়ের রোগীদের স্বজনেরা রোগীকে চিকিৎসকের কাছে না এনে নিয়ে যান ওঝার কাছে। সাপটি বিষধর না হলে কোনো চিকিৎসা ব্যাতিত এমনি এমনি রোগীরা সুস্থ হয়ে যান। আর স্বজনেরা মনে করেন, ওঝার ঝাড়ফুঁকেই রোগী ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু বিপদটা ঠিক তখনই হয়, যখন বিষধর সাপ দংশন করে। তখন ওঝার কাছে নেওয়ার কারণে সময় নষ্ট হয় এবং এরপর চিকিৎসকের কাছে আনা সত্ত্বেও রোগীকে বাঁচানো আর সম্ভব হয় না।

দেশের ৮৬ শতাংশ মানুষ ওঝার কাছে চিকিৎসা নিতে যায় 

 

 

 

 

বিগত বছর বন্যার সময় সাপের কামড়ে মারা যান ২৩ জন। এ তথ্য জানা যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে। সরকারিভাবে সাপের কামড়ের বিষয়ে নিয়মিতভাবে তথ্য-উপাত্ত সংগৃহীত হয় না। সাধারণত বন্যার সময় উপকূলীয় এলাকায় বেড়ে যায় সাপের কামড় । সেই সময়ের কিছু তথ্য তবুও সংগৃহীত হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে কেবলমাত্র সাপের কামড়ে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলেই সেই তথ্য পাওয়া যায়। এর বাইরে সর্পদংশনে আক্রান্ত অনেক রোগীই চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে ওঝার দ্বারস্থ হন। আর সেই তথ্য লিপিবদ্ধ সেখানে হয় না।

 

দেশে সাপের কাপড়ের ওপর নেই কোনো সাম্প্রতিক সরকারি গবেষণা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে জানা যায় যে ২০১০ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে সাপের কামড়ের ওপর এক গবেষণা করেন রিদওয়ানুর রহমান,বায়েজিদুর রহমান, আরিফুল বাশার, এম আবুল ফয়েজ, শাহজাদা সেলিম,  মোয়াজ্জেম হোসেন, জিয়াউল ইসলাম, হাবিব আহমেদ, আবুল হাসনাত মিলটন এবং অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক অ্যালিসন জোনস ও ক্যাথেরিন ডি’এস্তে—দেশি-বিদেশি একদল চিকিৎসক। তবে দেশের পুরো চিত্র উঠে আসেনি এ গবেষণায়। ওই গবেষণা থেকে উঠে আসে  বাংলাদেশে বছরে গড়ে এক লাখ মানুষের মধ্যে সাপের কামড়ের শিকার হয় প্রায় ৬২৩ জন । বছরে সাপের কামড়ে ৬ হাজার ৪১ জন মারা যায়। আর সাপে কাটার পর ৮৬ শতাংশ মানুষ যায় ওঝার কাছে । চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন মাত্র ৩ শতাংশ।

 

 

 

সাপের কামড়ের ওপর ২০১৬ সালে বাংলাদেশে আরোও একটি  পৃথক গবেষণা প্রকাশিত হয়। সে গবেষণায় বলা হয়, দেশে প্রতিবছর গড়ে এক লাখ মানুষের মধ্যে সাপের কামড়ের শিকার হয় প্রায় এগারো জন মানুষ। এর মধ্যে মারা যান এক লাখে প্রায় ১ জন। বছরে এদেশে সাপের কামড়ের ঘটনা ঘটে গড়ে ১৫ হাজার ৩৭২টি। এর মধ্যে ১ হাজার ৭০৯ জন মারা যান। সুইডেনের ওরেব্রো ইউনিভার্সিটি এবং সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) যৌথভাবে  ‘স্নেক বাইট এপিডেমিওলজি ইন বাংলাদেশ—এ ‘ন্যাশনাল কমিউনিটি বেজড হেলথ অ্যান্ড ইনজুরি সার্ভে’  নামক গবেষণাটি সম্পাদন করেছিল ।