তেঁতুল বিছা কামড়ালে কি করবেন?

 




তেঁতুল বিছারা বিষাক্ত এক প্রজাতির শিকারি প্রাণী। এরা এদের শিকারের শরীরে কামড় বসিয়ে বিষ উগলে দেয় ও শিকারকে অবশ করে দেয়। এরা মূলত পোকামাকড় ও কৃমি খেয়ে থাকে। যদিও এরা মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলে তবুও মানুষ এদের জ্বালাতন করলে এরা কামড়ে দিতে পারে খুব সহজেই। 

তেঁতুল বিছার রয়েছে  লম্বা, চ্যাপ্টা দেহ এবং অনেক পা সহ আর্থ্রোপড। যদিও বেশিরভাগ সেন্টিপিড মানুষের জন্য বিপজ্জনক নয়, কিছু প্রজাতি বেদনাদায়ক কামড় দিতে পারে যা ফোলা, লালভাব এবং অন্যান্য উপসর্গের কারণ হতে পারে।

একটি তেঁতুল বিছা কামড় একটি ধারালো চিমটির মতো অনুভূত হতে পারে, তারপরে তীব্র ব্যথা এবং ফোলাভাব হতে পারে। কামড়ের আশেপাশের জায়গাটিও লাল এবং স্ফীত হতে পারে এবং কিছু লোকের একটি ছোট ফোস্কা বা ফুসকুড়ি হতে পারে। বিরল ক্ষেত্রে, একটি সেন্টিপিড কামড় আরও গুরুতর লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে, যেমন পেশী দুর্বলতা, শ্বাস নিতে অসুবিধা এবং খিঁচুনি।

যদি আপনাকে একটি তেঁতুল বিছা কামড় দেয়, প্রথমে সাবান এবং জল দিয়ে ক্ষত পরিষ্কার করবেন। তারপর কামড়ের স্থানে একটি ঠান্ডা ভেজা কাপড় দিয়ে চাপ প্রয়োগ করবেন,  এতে ব্যথা এবং ফোলা কমে যাবে। এসিটামিনোফেন বা আইবুপ্রোফেনের মতো ওভার-দ্য-কাউন্টার ব্যথা উপশমকারীও ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করতে পারে। যাইহোক, যদি আপনি আরও গুরুতর উপসর্গ অনুভব করেন, যেমন শ্বাস নিতে অসুবিধা বা পেশী দুর্বলতা, অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

তেঁতুল বিছার কামড় প্রতিরোধ করা কঠিন হতে পারে, কারণ এই আর্থ্রোপডগুলো নিশাচর এবং প্রায়ই অন্ধকার, স্যাঁতসেঁতে জায়গায় যেমন বেসমেন্ট এবং হামাগুড়ি দেওয়ার জায়গাগুলিতে লুকিয়ে থাকে। যাইহোক, আপনার বাড়িকে পরিষ্কার এবং বিশৃঙ্খল মুক্ত রাখার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া সেন্টিপিডের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করতে পারে। আপনি এই আর্থ্রোপডগুলিকে আপনার বাড়িতে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়ার জন্য দরজা এবং জানালায় ফাটল এবং ফাঁক সিল করতে পারেন।


 

তেঁতুল বিছাদের কামড় খুব বেদনাদায়ক হয়। যতবড় সাইজ ততবেশি ব্যাথা। সকল প্রজাতির বিছা শিকারের শরীরে বিষ ঢুকিয়ে হত্যা করে। তবে তেঁতুল বিছাদের কামড় কদাচিৎ মানুষের শরীরে জটিলতা সৃষ্টি করে। আর এদের কামড়ও মানুষের জন্য প্রাণঘাতী নয়। 

 

যাইহোক কিছু শতপদী তেঁতুল বিছাদের রয়েছে বিশেষ ধরনের বিষ যা বিচিত্র রকমের বিষের সমন্বয়ে তৈরি। যেমন হিস্টামিন, সেরোটোনিন এবং হৃদযন্ত্র অসাড় করে দেয়ার মত বিষ। যদিও মানুষের জন্য এসব বিষ খুব একটা মারাত্মক নয় তবুও এদের কামড়ে এলার্জি জনিত উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অনেকটা বোলতা কিংবা মৌমাছির কামড়ের মত। 

তেঁতুল বিছা কেমন দেখতে হয়?

 

 




 

তেঁতুল বিছা বা শতপদী (Scolopendridae) খুব পরিচিত একটি প্রাণী আমাদের দেশে। তেঁতুলের খোসা ছাড়ালে যেমন লাগে , এ কীটটিকে দেখতেও থিক সেরকম লাগে। তাই নাম হয়েছে তেঁতুল বিছা। এরা প্রায় ১-৭ ইঞ্চি পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। এদের শরীরে থাকে অনেকগুলো পা। পা সংখ্যা ১৫ জোড়া থেকে শুরু করে ১৭৭ টি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এদের শরীরে বিজোড় সংখ্যক পা থাকে। 

তেঁতুল বিছা বা শতপদীরা অন্ধকার, স্যাঁতস্যাঁতে জায়গা এবং আর্দ্র জলবায়ু পছন্দ করে। যদিও এরা মরুভূমি কিংবা শুষ্ক অঞ্চলেও দিব্যি টিকে থাকতে পারে। এরা যেসকল স্থানে থাকতে পারে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ

 

  • মেঝের ফাটল
  • মেঝের ধারে নর্দমা
  • সিমেন্টের ব্লক
  • বনজঙ্গল
  • বাগান

এরা পচা কাঠের ভেতর , গাছের গুঁড়ি , ফুলের টব কিংবা পাথরের ভেতরেও থাকতে পারে।  এমনকি পানির নিচে, গুহার ভেতরে এবং মাটির প্রায় হাজার ফুট গভীরেও এদের সন্ধান মেলে।

 

কিভাবে তেঁতুল বিছা কামড় দেয়? 

 

 

তেঁতুল বিছা এদের মুখের সামনে অবস্থিত একজোড়া সাঁড়াশির মত বাঁকানো বিষ দাঁত দিয়ে চামড়া ফুটো করে দেয়। আর সাথে সাথে উগলে দেয়  বিষ। মূলত এদের বিরক্ত করলে কিংবা হাত দিয়ে ধরতে গেলেই কামড় দেয়। অনেকসময় মানুষ এদের খালি পায়ে ভুলবশত পাড়া  দিলেও কামড় দিয়ে  ফেলে। 

 

সব ধরনের বিছাদেরই কামড় দেয়ার ক্ষমতা থাকে। যদিও কিছু প্রজাতির বিছাদের কামড় মানুষের চামড়া ভেদ করার মত ততটা শক্তিশালী হয়না।

 

 তেঁতুল বিছার কামড় দেখতে কেমন হয়? 

 

 

 

তেঁতুল বিছার কামড় দিলে চামড়ায় দুটো বিষ দাঁতের চিহ্ন দেখা যায়। চামড়ার এ দুই ফুটোতেই এরা বিষ উগলে দেয়। কামড় দেয়া স্থানের আশেপাশে ফুলে লাল হয়ে যেতে পারে। 

 

বিষের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে ব্যাথার তীব্রতা। ছোট বিছার কামড়ে কম বিষ নিঃসৃত হয় তাই ব্যাথাও কম লাগে। অপরদিকে  বড় সাইজের তেঁতুল বিছার কামড় দিলে ক্ষতস্থানে বেশি পরিমাণ বিষ ঢুকে যায়, তাই ব্যাথার তীব্রতাও বেশি হয়। 

 

ব্যাথা,ক্ষতস্থান  লাল হয়ে যাওয়া এবং ক্ষতস্থান ফুলে যাওয়া অতি স্বাভাবিক লক্ষণ। এই উপসর্গগুলো কয়েক ঘণ্টা থেকে শুরু করে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। 

 

অন্যান্য উপসর্গগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ

  • জ্বর
  • গা শিরশির অনুভূতি
  • বমি বমি ভাব
  • ক্ষতস্থান বেশ ফুলে যাওয়া
  • লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া
  • বুক ধড়ফড় করা
  • চুলকানি

 এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

 

তেঁতুল বিছা কামড়ালে আপনাকে কি করা উচিত?

 

 

তেঁতুল বিছার কামড় অন্যান্য বিপদজনক বিষাক্ত পোকা মাকড়ের কামড়ের মতই দেখতে হতে পারে। যদি আপনি নিশ্চিত না থাকেন এবং আপনার লক্ষণ যদি মারাত্মক হয়  তাহলে অবশ্যই চিকিতসহকের পরামর্শ নিন। 

 

কোনোরূপ জটিলতা না থাকলে বিছার কামড়ের চিকিৎসা ঘরেই করা যেতে পারে। এর জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে

  • ক্ষতস্থানে যতদ্রুত সম্ভব গরম পানির সেঁক দিন। এর জন্য আপনার ক্ষতস্থান গরম পানিতে ডুবিয়েও রাখতে পারেন।
  • এরপর বরফ ব্যবহার করতে পারেন ক্ষতস্থানের ফুলে যাওয়া কমাতে। 
  • প্রয়োজনে ব্যাথানাশক কিংবা এলার্জি প্রতিরোধক ঔষধ ব্যবহার করতে পারেন। 

 

বিছার কামড়ে একটি ক্ষতস্থান সৃষ্টি  হয়। এই ক্ষতস্থানে জাতে সংক্রমণ না  ঘটে সেজন্য এন্টিবায়োটিক মলম ব্যবহার করতে পারেন। 

 

যদি দেখেন যে লক্ষণ কয়েকদিন অতিবাহত হবার পরেও কমছে না তাহলে জরুরি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপনাকে কর্টিকোস্টেরয়েড গ্রহণ করতেও হতে পারে।

 

কি ধরনের জটিলতা তেঁতুল বিছার কামড় থেকে হতে পারে?

 

 

 

তেঁতুল বিছার কামড়ের পরিণতিতে হতে পারে চামড়ায় ইনফেকশন কিংবা টিস্যু ড্যামেজ। আপনার চিকিৎসক আপনাকে এর জন্য টিটেনাস এর ইনজেকশনও দিতে পারেন। তাছাড়া ক্ষতস্থানে সংক্রমণ হলে তিনি এন্টিবায়োটিক ঔষধ গ্রহণেরও পরামর্শ দিতে পারেন।

 

তেঁতুল বিছা কামড় দেয়ার ৪৮ ঘণ্টা পরেও যদি উপসর্গগুলো না কমে তবেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। তাছাড়া জ্বর আসলে, খতস্তাহ্নের চারপাশে লাল দাগ দেখা দিলে, অথবা ক্ষতস্থান থেকে কটু গন্ধ বের হলে  সেটাও জানান চিকিৎসককে। 

 

বিছার কামড়ে এলার্জিক প্রতিক্রিয়াও লক্ষ্য করা যেতে পারে। তীব্র চুলকানি, মাথাঘোরা ভাব, র‍্যাশ ওঠা ইত্যাদি এলার্জিক প্রতিক্রিয়ার লক্ষণ হতে পারে। যদি আপনি দেখেন যে আপনার ঠোঁট ফুলে যাচ্ছে, গলা, মুখ বা জিহ্বা ফুলে যাচ্ছে তাহলে অবশ্যই স্থানীয় জরুরি সেবা নিন। প্রয়োজনে আশেপাশের কারো সাহায্য নিন। 

 

পরিশেষে 

 

যদি আপনি একটি তেঁতুল বিছা কামড় দিয়ে থাকে এবং এই উপসর্গগুলোর মধ্যে কোনটি অনুভব করেন, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসা সেবা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, উপসর্গগুলো উপযুক্ত চিকিৎসার  মাধ্যমে কয়েক ঘন্টা বা দিনের মধ্যে কমে যাবে। যাইহোক, কেউ কেউ আরও গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী উপসর্গগুলি অনুভব করতে পারে, বিশেষত যদি তাদের বিষের প্রতি অ্যালার্জি থাকে বা অন্যান্য স্বাস্থ্যগত জটিলতা  থাকে।

যদিও তেঁতুল বিছার কামড় বেদনাদায়ক, তবুও এটা তেমন মারাত্মক কোনো ক্ষতি করে না মানুষের। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাসায় বসেই এর চিকিৎসা করা যায়। তবে আপনার লক্ষণ যদি খারাপ হতে থাকে এবং যদি ইনফেকশন ও এলার্জি জনিত উপসর্গ দেখা দেয় তবে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।