এশীয় কালো ভাল্লুক

 


 

এশীয় কালো ভাল্লুক পাকিস্তানের উত্তরাংশ, আফগানিস্তানের দক্ষিণে, হিমালয়ের পূর্বে, উত্তর ভিয়েতনাম, চীনের দক্ষিণে এবং থাইল্যান্ডে পাওয়া যায়।

এশীয় কালো ভাল্লুকরা আর্দ্র ও স্যাঁতস্যাঁতে বনে বাস করে। যেখানে পাহারের একটু খাঁড়া ঢাল থাকে এবক বনের যে স্থানে ডালপালা একটু ঘন ঠিক সে জায়গাই এরা পছন্দ করে। মাঝে মধ্যে এরা বন-জঙ্গল ছেড়ে সমতল জমিতেও চলে আসে। 

এদের পুরুষ ও স্ত্রীর মধ্যে যথেষ্ট আকৃতিগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। পুরুষ ভাল্লুক ১১০ থেকে ১৫০ কেজি পর্যন্ত ওজনে হয় আর স্ত্রীদের ওজন হয় ৬৫ থেকে ৯০ কেজি। এদের মাথা বড় এবং গোলাকার। চোখ ছোট। কান দুটো বড়। এদের দেহ বেশ ভারি, পা গুলো মোটা ও ভীষণ শক্তিশালী। থাবাগুলো বেশ বড়সড়। লেজ রয়েছে তবে দেখা যায়না বললেই চলে। বুকের মধ্যে ইংরেজি "V" অক্ষরের মত সাদা দাগ রয়েছে। আর থুতনির সামান্য অংশে সাদা লোম রয়েছে। 

বন্য পরিবেশে এশীয় কালো ভাল্লুক সম্পর্কে এ পর্যন্ত খুব কমই জানা গেছে। যা কিছু এদের স্বভাব-বৈশিষ্ট্য ও আচরণ জানা গেছে তা মূলত চিড়িয়াখানায় বন্দী ভাল্লুকদের ওপর গবেষণা করেই। এদের দেহ ও পা বেশ শক্তপোক্ত হওয়ায় সহজেই এরা দুপায়ে দাঁড়িয়ে যেতে পারে। এমনকি মানুষের মত দু পায়ে বেশ কিছুদূর হাঁটতেও পারে।  এদের বেশ পুরু কালো ও ঘন লোমের আস্তর রয়েছে। এদের কান দুটো অন্যান্য ভাল্লুক প্রজাতির থেকে একটু বেশিই বড় থাকলেও শ্রবণশক্তি ততটা উন্নত নয় এদের। দৃষ্টিশক্তিও খুব একটা ভালো না। তবে এই অভাব পূরণ করে তাদের প্রখর ঘ্রাণশক্তি। এরা অনেক দূর থেকেই আশেপাশে যেকোনো কিছুর গন্ধ আন্দাজ করতে পারে। 

 


 

এশীয় কালো ভাল্লুক একাকী প্রাণী। শুধুমাত্র প্রজননের সময়ই কেবল এদের একত্রে দেখা যায়। স্ত্রী ভাল্লুককে পাবার জন্য ও এলাকা দখলের জন্য পুরুষ ভাল্লুকের লড়াইও দেখা যায় এ সময়।এদের নখর অন্যান্য ভাল্লুক প্রজাতির তুলনায় কিছুটা ছোট। 

এরা বেশ ভারি হওয়া সত্ত্বেও গাছে আরোহণে বেশ পটু। এরা গাছে উঠে গাছের ডালপালা ভেঙ্গে সেখানে বাসা তৈরি করে। এতে করে এদের ফলমূল ও ছোটখাটো প্রাণী শিকার করতে সুবিধা হয়। 

এশীয় কালো ভাল্লুক পুরো শীতকাল জুড়ে শীতনিদ্রায় থাকে। এজন্যে তারা যদিও আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়। হেমন্তকালেই এরা পেটপুরে যত খাবার খাওয়া দরকার খেয়ে নেয়। এসময় এরা বেশ মোটাসোটা হয়ে পড়ে। কেননা এই মোটাসোটা শরীরের চর্বিই পুরো শীতকালজুড়ে এদের শীতনিদ্রাকালীন সময় শরীরকে টিকিয়ে রাখবে। 

 


 এরা ৪ থেকে ৫ বছর সময়ের মধ্যেই প্রজননে সক্ষম হয়ে ওঠে। স্ত্রী ভালুকরা ৬ থেকে ৮ মাস গর্ভকালে থাকার পড় ১-৪ টি শাবক প্রসব করে। স্ত্রী ভালুক সাধারণত নদীর ধারে পথুরে গুহায় শাবক প্রসব করে। জন্মের সময় বাচ্চাদের শরীরে কোন লোম থাকেনা। আর ঠিক ৬ মাস পর এরা মায়ের দুধ ছেড়ে শক্ত খাবার খেতে পারে। এরা প্রায় তিন বছর যাবত এদের মায়ের সাথে থাকে। মা ভাল্লুক সন্তানদের প্রতি অত্যন্ত রক্ষণশীল হয়। তাই শাবকের আশেপাশে থাকা অত্যন্ত বিপদজনক।

বুনো পরিবেশে এশিয় কালো ভাল্লুক ২৫ বছর বাঁচতে পারে আর বন্দী অবস্থায় সর্বোচ্চ ৩০ বছর বাঁচে। 

যদিও এদেরকে মাংসাশী শ্রেণিতে ফেলা হয়েছে, তবুও অন্যান্য ভাল্লুকের প্রজাতির মতি এরাও সর্বভুক। এরা ছোটছোট প্রাণী থেকে শুরু করে মাছ, ফলমূল, ঘাস খেয়ে থাকে। যদিও ফলমূল, একর্ন  এদের মাংসের মত পুষ্টি দিতে পারে না তবুও এরা এদের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করে গাছের ফলমূল, বিচনাট, একর্ন ইত্যাদি অনুসন্ধানে। তাছাড়া উইপোকা ও পিঁপড়েও এদের খুব প্রিয় খাবার। 

এদের বৃহদাকার ও হিংস্র স্বভাবের জন্য প্রকৃতিতে এদের কোন শত্রু নেই বললেই চলে। এদের প্রধান শত্রু বলতে গেলে মানুষ। বনাঞ্চল ধ্বংস করার ফলে এরা এদের প্রাকৃতিক আবাস হারাচ্ছে। মানুষ কারণে অকারণে এদের শিকার করে। ভাল্লুক শিকার অধিকাংশ দেশে নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও ঐতিহ্যবাহী ঔষধ তৈরির জন্য এদের দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ খুব চড়া দামে কালোবাজারে বিক্রি হয়। আর এগুলো ঠেকানোর মত কোন বিশেষ পদক্ষেপও নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। তাই এই প্রাণীটির সংখ্যাও দিনে দিনে কমে আসছে।