জায়ান্ট মিলিবাগ পোকা সম্পর্কে জানুন

 



মিলিবাগ
  নরম, সাদাটে অনেকটা চিড়ের মত দেখতে চ্যাপ্টা এক ধরনের পোকা। পোকাটি ঠিক আমাদের দেশীয় কোন প্রজাতি নয়, এটি একটি আফ্রিকান পোকা। এগুলো বিভিন্ন ধরনের ফলদ উদ্ভিদ যেমন আঙ্গুর, লেবু , কাঁঠাল ইত্যাদির পাতা খেয়ে থাকে। এরা পাতা ও গাছের বাকলে সূক্ষ্ম ছিদ্র করে তা থেকে রস চুষে খায়। 

মিলিবাগের শরীর বিভিন্ন অংশে বিভক্ত এবং সাধারণত মোম আবৃত হয়ে থাকে। কিছু কিছু প্রজাতির শরীরে লম্বা লম্বা ফিলামেন্ট ও দেখা যায়। 

 


মিলিবাগের একটি ইন্টারেস্টিং দিক হল এদের পুরুষ পোকাগুলোর ডানা থাকে এবং এরা উড়তে পারে। পুরুষ পোকাগুলোর দেহটি লাল রঙের হয়ে থাকে আর  ডানাগুলো হয় কালো বর্ণের। পুরুষ পোকাগুলো দেখতে বেশ সুন্দর হলেও স্ত্রী পোকাগুলো দেখতে বিদঘুটে। অর্থাৎ আমরা গাছের মধ্যে যে চিড়ের মত পোকাগুলো লেগে থাকতে দেখি সেগুলোই স্ত্রী মিলিবাগ। স্ত্রী মিলিবাগ সাদা বর্ণের হয় আর এদের কোনো ডানা থাকেনা। তাই এরা উড়তেও সক্ষম নয়। এরা আকারেও বেশ বড়সড় হয়। 

মিলিবাগ সাধারণত কলোনি গঠন করে থাকে। দেখা যায় একটি পাতা কিংবা গাছের বাকলে অনেকগুলো মিলিবাগ একত্রে আটকে থাকে। এদের বংশবিস্তার হয় খুব দ্রুত।পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী মিলিবাগ ১০০-২০০ টিরও বেশি ডিম পারতে সক্ষম। এরা সাধারণত ১০ থেকে ২০ দিনের পিরিয়ডে ডিম পেরে থাকে। ডিমগুলো তুলোর মত থলেতে আবৃত থাকে এবং এগুলো পাতার শীর্ষে কিংবা ফলের ছালে আটকানো থাকে। 

 


মিলিবাগ উদ্ভিদের পাতার ফ্লোয়েম টিস্যু শোষণ করে থাকে যার ফলে পাতার জীবনীশক্তি ও ফলের গুণমান হ্রাস পায়। এরা মধুর ন্যায় থকথকে আঠালো পদার্থ ও মোম নিঃসরণ করে যার ফলে একটি পাতা আরেকটি পাতার সাথে লেগে থাকে। মিলিবাগের উপদ্রব বেড়ে গেলে গাছের পাতা ঝরে যেতে পারে। 

শুধু কীটনাশকে মিলিবাগ দমন বেশ কষ্টসাধ্য একটি ব্যাপার। তবে মিলিবাগ যেহেতু বেশ ধীরগতি সম্পন্ন তাই ধারণা করা হয় মানুষের ব্যবহারকৃত সামগ্রীর মাধ্যমেই এরা বিস্তৃত হয়ে থাকে। তাই বাগানের জিনিসপত্র ভালভাবে পরিষ্কার করা আবশ্যক। বাগানের কোনো উদ্ভিদে মিলিবাগ দেখা গেলে সে গাছটি সাথে সাথে সরিয়ে ফেলতে হবে যাতে করে অন্যান্য গাছগুলো আক্রান্ত না হতে পারে। অনেক  জায়গায় মিলিবাগ দমনে অন্যান্য পোকা-মাকড়ও ব্যবহৃত হয়। যেমন লেডি বিটল, মাকড়সা  ইত্যাদি। 

তবে রাসায়নিক প্রয়োগে মিলিবাগ দমন বেশ কঠিন একটি ব্যাপার। কারণ মিলিবাগের দেহস্থিত মোম জাতীয় পদার্থ কীটনাশককে শরীরের ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয়। তাই কীটনাশক প্রয়োগে সহসায় তেমন কোন ফল পাওয়া যায়না। তবে সাবান পানি ব্যবহারে মিলিবাগ দমন করায় বেশ ভাল ফল পাওয়া গেছে। আবার বৃষ্টি হলে  কিংবা প্রচুর পানি ছিটালে পোকাটির উপদ্রব কমতে পারে বলে ধারণা করা হয়। আবার কার্বোসালফান কিংবা কনফিডার স্প্রেও এক্ষেত্রে কিছুটা কার্যকরী সমাধান দেয়।

মিলিবাগ পোকাটি মানুষের কোনো ক্ষতি না করলেও  ফসলের ক্ষতি করে বেশ। তাই এটিকে পেস্ট বা ক্ষতিকারক পতঙ্গ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তাই পর্যাপ্ত সতর্কতা  অবলম্বন ও উদ্ভিদের ওপর যত্ন নিলে এ পোকার আক্রমণ হতে গাছকে রক্ষা করা সম্ভব।