আপনি যদি মাকড়সাকে ভয় পান তবে নিশ্চয়ই ব্ল্যাক উইডো মাকড়সা সম্পর্কে শুনেছেন? এ বিষাক্ত মাকড়সাটি মানুষের জন্য বেশ ভয়ের একটি কারণ। সৌভাগ্যবশত আপনি এটি জেনে খুব খুশি হবেন যে এ মারাত্মক মাকড়সাটিরও এক যম রয়েছে। যার নাম নীল বোলতা। বৈজ্ঞানিক নাম Chalybion californicum, যা ইংরেজিতে ব্লু মাড ওয়াস্প নামে পরিচিত এবং মাকড়সা শিকারের জন্য বিখ্যাত।
নীল বোলতা আমাদের দেশে সবখানেই দেখতে পাওয়া যায়। অনেক সময় দেখা যায় এরা কাঠের দরজা কিংবা কাঠের বিছানা, টেবিল, জানালার কাঠের আশেপাশে উড়ছে। দেখতে বেশ সুন্দর। এদের দেহের রঙ কালচে নীলাভ সবুজ। এদের কোমরের অংশটি বেশ সরু ও লম্বা। দৈর্ঘ্যে সাধারণত ১০ থেকে ২৩ মিলিমিটার হয়ে থাকে। এটি বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা,অস্ট্রেলিয়া হাওয়াই, বারমুডা, দক্ষিণ কানাডা, মেক্সিকোতে পাওয়া যায়।
নীল বোলতা শিকারি হলেও মজার ব্যাপার হল এরা নিরামিষভোজী। এরা বুনো ফুলের মধু ও পরাগ খেয়ে থাকে। উড়ার জন্য পর্যাপ্ত শক্তিপ্রাপ্তির জন্য অন্যান্য প্রজাতির বোলতার মতই এরাও ফুলের মধুর দরকার হয়। পূর্ণবয়স্ক বোলতারা ফুলের মধু খেয়ে থাকলেও এরা এদের লার্ভাদের উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার যেমন মাকড়সা খাইয়ে থাকে। মাকড়সা শিকারের সময় এরা খুব সাবধানে মাকড়সাকে এদের জাল থেকে সরিয়ে আনে। মাকড়সার পা অথবা দেহে ফুটিয়ে দেয় এদের বিষাক্ত হুল যেটি মাকড়সাকে অবশ করিয়ে দেয়। মাকড়সাটি চলাচলে অক্ষম হয়ে পরলে সেটিকে এরা এদের বাসায় উড়িয়ে নিয়ে আসে।
নীল বোলতার বাসা তৈরির ব্যাপারটি বেশ দেখার মত। বলতে গেলে এটা একরকম বাসা চুরি করা । প্রায়শই এরা অন্যান্য হলদে বোলতাদের বাসা নিজের মত করে পুনর্নির্মাণ করে । একাজ করার সময় তারা বাসার প্রকোষ্ঠ থেকে অন্যান্য বোলতার লার্ভাদের সরিয়ে ফেলে । অন্যান্য বোলতাদের ধরে আনা পোষক মাকড়সাটিকে সরিয়ে ফেলে সদ্য নিজের ধরে আনা মাকড়সাটি সেখানে রাখে। এরা সেই বাসাটিকে পানি দিয়ে কিছুটা নরম করে রাখে। এরপর এরা সদ্য ধরে আনা অবশ মাকড়সাটির দেহের ভেতরে ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার পর সে বাসাটির প্রকোষ্ঠের মুখ ভালভাবে সিলগালা করে দেয়। অবশ মাকড়সাটির দেহের ভেতরেই বেড়ে উঠতে থাকে এদের লার্ভা যারা ভেতর থেকে জীবিত মাকড়সাটিকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেতে থাকে। অনেকটা গা শিউরে ওঠার মত ব্যাপার। লারভাগুলো সাদা রেশমের মত কোকুন থেকে ধীরে ধীরে বেড়ে প্রায় ১ ইঞ্চি পরিমাণ বড় হয়। লার্ভাগুলোর দেহের রঙ অনেকটা ক্রিম কালারের। এদের পা থাকেনা এবং দেখতে লাগে শুঁয়োপোকার মত । সাধারণত বোলতার এ বাসাগুলো কোন ছায়াঘেরা দালান কিংবা সেতুর নিচে দেখা যায়।
নীল বোলতারা মূলত একাকী থাকে। শুধুমাত্র স্ত্রীরাই বাসা বানায় ও খাদ্যের যোগান দেয়। এরা বছরে একাধিকবার প্রজনন করে থাকে।
নীল বোলতা যেহেতু বিষাক্ত ব্ল্যাক উইডো মাকড়সা শিকার করতে সক্ষম তাই মনে প্রশ্ন আসতেই পারে যে আমাদের কি এদের ভয় পাওয়া উচিত না? এর উত্তরঃ মোটেও না। কারণ যদিও মানুষকে হুল ফুটানোর ক্ষমতা এদের রয়েছে , এরা কিন্তু মোটেও উগ্র কোন পতঙ্গ নয়। এর কখনই এমনি এমনি আপনাকে দংশন করবে না। আর এদের দংশনেও মানুষের কিছু হয় না। তাই এরপর আপনি যখনি প্রকৃতি দর্শনে ঘুরতে বেরুবেন তখনি এদের ভালোমত পর্যবেক্ষণ করতে যেন ভুলবেন না।