পাখিটিকে কমবেশি আমরা সবাই দেখেছি কিন্তু অনেকেই এর নাম জানিনা।
এর নাম হল বসন্ত বৌরি। বৈজ্ঞানিক নাম Megalaima asiatica। এটি মেগালাইমিডি (Megalaimidae) পরিবার বা গোত্রের অন্তর্গত। পাখিটি দেখতে পাওয়া যায় মূলত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। এটি ফলাহারী পাখি এবং এ প্রজাতির অধিকাংশ পাখিই ঠোঁট দিয়ে ঠুকরিয়ে ঠুকরিয়ে ফল খায়। ইংরেজিতে এ পাখির নাম Blue-Throated Barbet। গলায় ও বুকে গাঢ় আকাশী রঙের জন্যই মূলত এর এমন নাম।পৃথিবীব্যাপী এদের প্রায় ৮৪ প্রজাতি রয়েছে। যার মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে ৫ প্রজাতি। এই পাখিদের বড়সড় ও মজবুত ঠোঁটের চারপাশে রয়েছে লম্বা লম্বা সংবেদনশীল রোম। পালকের রঙ উজ্জ্বল সবুজ। অনেকটা টিয়াপাখির মত। এরা গাছে বসবাস করে ও ফল খেয়ে থাকে। সাধারণত গাছের কোটরে বাসা বাঁধে।এরাও কাঠঠোকরার মত গাছের গুঁড়ি বা শাখা ঠুকরে ঠুকরে বাসা বানায়। এদের কিছু প্রজাতি আবার উইয়ের ঢিবি অথবা মাটির টিলায় গর্ত খুঁড়ে বাসা বানায়। তবে অধিকাংশ সময় এরা কাঠঠোকরার পরিত্যক্ত গর্তে বাসা বানায়। এরা কাঠঠোকরার এক ধরনের নিকটাত্মীয়।
পাখিটির বিশেষত্ব হল এরা একটানে "কুক্কুরবুত কুক্কুরবুত" স্বরে অবিরাম করে ডেকে যেতে পারে। একটানা অবিরাম ডাকার এই সুখ্যাতির জন্যে অনেক জায়গায় এর নাম "কাঁসারি" পাখি। মাঝে মধ্যে এক পাখির ডাকে সাড়া দিয়ে আরেক পাখিও পাল্লা দিয়ে ডাকতে থাকে। যদিও এরা শীতকালে কম ডাকে।
এদের মুখ, গলা ও বুকের সামনের অংশ আকাশী নীল। মাথার উপরের অংশের রঙ খয়েরি। আর পুরো শরীর টিয়াপাখির ন্যায় সবুজ। পা দুটো ধুসর বর্ণের। সাধারণত স্ত্রী ও পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম হয়। এরা দৈর্ঘ্যে প্রায় ২৫ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে।
এরা ঘন গাছপালা ঘেরা এলাকা বেশি পছন্দ করে। গাছে বসে থাকলে এদের দেখা পাওয়া ভার , শুধু ডাক শুনেই উপস্থিতি আন্দাজ করা যায়। তবে এরা গাছের মগডালেই বেশি বসে।
এদের প্রজনন কাল মার্চ মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত হয়ে থাকে। গাছের কোটরেই এরা ডিম পাড়ে। একবারে ৩-৪ টি ডিম পাড়ে। ডিমের রঙ সাদা হয়ে থাকে। ছানার লালনপালনে পর্যায়ক্রমে পুরুষ ও স্ত্রী উভয় পাখিই ভূমিকা রাখে।