বিড়াল কি মানুষকে অসুস্থ করতে পারে?

মানবদেহে প্রাণীবাহিত রোগ বিভিন্ন উপায়ে ছড়াতে পারে। সেটা বিড়াল কিংবা কুকুর থেকেও হতে পারে। তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা হতে পারে আপনার সর্বোৎকৃষ্ট প্রতিরক্ষা। বিড়ালের লিটারবক্স পরিষ্কারের সময় অবশ্যই গ্লাভস পরিধান করুন। আর আপনি যদি গর্ভবতী নারী হন তাহলে কখনই লিটারবক্স ধরবেন না। মনে রাখবেন, বিড়ালকে খাওয়ানোর পর ভালোমত হাত ধুতে হবে। নিচে কিছু বিড়াল বাহিত রোগ-ব্যাধির ব্যাপারে আলোচনা করা হলঃ

ক্যাট স্ক্র্যাচ ফিভারঃ

বিড়ালের পাকস্থলীতে যদি কোনো সংক্রমিত মাছি কিংবা মল ঢুকে যায় তবে এরা বার্টোনেলোসিস নামক রোগে আক্রান্ত হয়। এ রোগের অপর নাম ক্যাট স্ক্র্যাচ ফিভার। আক্রান্ত বিড়াল আপনাকে কামড় বা আঁচড় কিংবা পশমের মাধ্যমে সংক্রমিত করতে পারে। বিড়ালের কামড় কিংবা আঁচড়ের পর জ্বর, মাথাব্যাথা, গ্ল্যান্ড ফুলা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। এক্ষেত্রে চিকিৎসক সাধারণত এন্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন।

 

 

এই রোগটি প্রতিহত করতে বেওয়ারিশ ও রগচটা বিড়ালদের এড়িয়ে চলুন। আর কখনোই বিড়ালকে আপনার শরীরের ক্ষতস্থান চেটে দিতে দিবেন না। কারণ এর লালায় থাকা ব্যাকটেরিয়া আপনার ক্ষতস্থানে সহজেই ইনফেকশন সৃষ্টি করতে পারে। 

গোলকৃমিঃ

 


 

গোলকৃমির সংক্রমণ বিড়ালের মধ্যে খুবই সাধারণ। আর মানুষের মাঝে এর সংক্রমণ ঘটতে পারে আক্রান্ত বিড়ালের মল থেকে। বিশেষ করে বিড়ালের লিটারবক্স হাত দিয়ে স্পর্শ করলে খুব সহজেই এই ক্রিমির সংক্রমণ ছড়িয়ে যায় মানুষের মাঝে। মানুষের ক্ষেত্রে সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে  কাশি, শ্বাসকষ্ট, দমবন্ধ ভাব, পেটব্যাথা, বমি ভাব, ডায়রিয়া এবং খাবারে অরুচি। এ ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত চিকিৎসা নিন।

টক্সোপ্লাসমোসিসঃ

 



 

টক্সোপ্লাসমোসিস একটি পরজীবীর সংক্রমণ যেটি সাধারণত কাঁচা মাংস ভক্ষণের মাধ্যমে বিড়ালের শরীরে ছড়িয়ে থাকে। এই পরজীবীরা বিড়ালের অন্ত্রে বাস করে এবং মলের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। আর এর সংস্পর্শে আসলে মানুষও আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে বিড়ালের লিটারবক্স খালি হাতে স্পর্শ করলে খুব সহজেই এই পরজীবীর সংক্রমণ ছড়িয়ে যায়। গর্ভবতী নারীদের এজন্য কোনোক্রমেই বিড়ালের লিটারবক্স স্পর্শ করা উচিত নয়। কারণ এই পরজীবীর সংক্রমণ গর্ভবতী মা থেকে অনাগত সন্তানের মধ্যেও ঘটতে পারে। এন্টিবায়োটিক টক্সোপ্লাসমোসিস পরজীবীর সংক্রমণ কিছুটা কমিয়ে দিলেও এটির আদৌ কোনো প্রতিকার নেই।

দাদ বা রিং ওয়ার্মঃ

 

দাদ বা রিং ওয়ার্ম হল একটি ছত্রাকজনিত চর্মরোগ  যেটি বিড়াল থেকে মানুষের মাঝে সরাসরি সংক্রমিত হতে পারে। আক্রান্ত বিড়ালের লোম ও খুশকি থেকে ছড়িয়ে থাকে এ রোগ। এক্ষেত্রে মানুষ ও বিড়াল উভয়ের চামড়ায় আঁশের মত বৃত্তাকার চাকা চাকা দাগ দেখা যায়। এ রোগ প্রতিরোধে মানুষের ক্ষেত্রে এন্টিফাঙ্গাল মলম আর বিড়ালের ক্ষেত্রে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মলম ব্যবহার করা যেতে পারে।

 

র‍্যাবিস বা জলাতঙ্কঃ

 



সাধারণত বিড়ালের কামড়ের মাধ্যমে জলাতঙ্ক রোগ ছড়িয়ে থাকে। তাই বিড়াল কামড় দিলে সঙ্গে সঙ্গে সাবান পানি দিয়ে ক্ষতস্থান ভালোমত ধুয়ে নিতে হবে ও এন্টিসেপ্টিক মলম লাগাতে হবে। বিড়ালের জলাতঙ্কের ভ্যাক্সিন দেয়া আছে কিনা এ ব্যাপারে আপনি যদি নিশ্চিত না হন তাহলে সময় নষ্ট না করে জলদি চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। জলাতঙ্কের র‍্যাবিস ভাইরাস ঠেকাতে কয়েক সিরিজ ইনজেকশন নেয়া লাগতে পারে আপনাকে। 

বিড়ালের এইডস ও হার্পিসঃ

 

 

এ রোগগুলো নিয়ে বেশ গুজব থাকলেও আদতে এগুলো মানুষের মাঝে সংক্রমিত হয়না। এই রোগদুটি কেবল বিড়ালের মধ্যেই দেখা যায়। এ রোগে আক্রান্ত বিড়ালের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে থাকে এবং শ্বসনতন্ত্রে সংক্রমণ দেখা দেয়। বিড়ালের এইডস ও হার্পিসের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে সাময়িক উপশমের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।