শ্বেত ভাল্লুক বিধাতার সৃষ্ট একটি অত্যাশ্চর্যজনক প্রাণী যার রয়েছে অনেক ব্যতিক্রমধর্মী বৈশিষ্ট্য। শ্বেত ভাল্লুকের রয়েছে অনেক ব্যাতিক্রমধর্মী বৈশিষ্ট্য যেগুলো সম্পরকে আমরা অনেকেই ওয়াকিবহাল নই । শ্বেত ভাল্লুক সম্পর্কে অজানা দশটি সত্য নিচে তুলে ধরা হলঃ
১। শ্বেত ভাল্লুকেরা সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী হিসেবে পরিচিত
জীবনের অধিকাংশ সময়ই মেরু অঞ্চলের সামুদ্রিক বরফের অপর অতিবাহিত করে শ্বেত ভাল্লুকেরা। আবাস , খাদ্য প্রায় সবকিছুর জন্যই এদের সামুদ্রিক পরিবেশের ওপর নির্ভর করতে হয়। একারনেই একমাত্র এ ভাল্লুকের প্রজাতিটিই সামুদ্রিক স্তন্যপায়ি হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে।
২। শ্বেত ভাল্লুকেরা আসলে সাদা বরনের নয়, বরং এরা কালো
জেনে অবাক হবেন যে শ্বেত ভাল্লুকের পশম স্বচ্ছ হয়ে থাকে। আর এ ভাল্লুকটিকে আমরা সাদা দেখি কেবলমাত্র বরফের সাদা রঙ এদের পশমে প্রতিফলিত হয় বলে। আর পশমের এ পুরু আস্তরনের ভেতরেই রয়েছে এদের নিকশ কালো চামড়া।
৩। এরা একনাগাড়ে দিনের পর দিন সাঁতরাতে পারে
পানিতে ঘণ্টায় প্রায় ছয় মাইল বেগে সাঁতার কাটতে সক্ষম শ্বেত ভাল্লুক সমুদ্রে দীর্ঘ পথ পারি দিতে পারে। এদের বৃহদাকার পায়ের থাবা মুলত সাঁতার কাটার জন্যই অভিযোজিত হয়েছে। পেছনের পা দুটোকে রাডারের মত করে ব্যবহার করে এবং সামনের পা দুটো দিয়ে প্যাডেল করে এরা সাঁতরাতে থাকে।
৪। শ্বেত ভাল্লুকেরা ২% এরও কম ক্ষেত্রে শিকারে সফল হয়ে থাকে
যদিও শ্বেত ভাল্লুকের জীবনের অর্ধেক অংশই অতিবাহিত হয় শিকার খোঁজায় তবুও এরা শিকারে খুব কমই সফল হয়। শ্বেত ভাল্লুকের খাদ্যতালিকায় প্রধানত থাকে রিং সিল, বিয়ারডেড সিল, যদিও এরা খেত্র বিশেষে উচ্ছিষ্টভোগি হয়ে থাকে এবং ছোট ছোট পাখি, ডিম ও শাক-সবজিও খেয়ে থাকে।
৫। বিজ্ঞানিরা শ্বেত ভাল্লুকের পায়ের ছাপ থেকেই ডিএনএ শনাক্ত করতে পারেন
WWF এবং ডিএনএ স্পেশালিস্ট প্রতিষ্ঠান SPYGEN একটি বিশেষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে যেখানে তুষারের মধ্যে থাকা ভাল্লুকের পায়ের ছাপ থেকেই এদের ডিএনএ পৃথক করা সম্ভব। শুধু তাই নয় , শ্বেত ভাল্লুকের পায়ের ছাপ থেকে ভাল্লুকের ডিএনএ ছাড়াও এটির শিকারকৃত সিলের ডিএনএরও সন্ধান পাওয়া যায়।
৬। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত হুমকি ছাড়াও এরা আরও অন্যান্য হুমকির সম্মুখীন
যদিও জলবায়ু পরিবর্তন মুলত শ্বেত ভাল্লুকের অস্তিত্বের জন্য প্রধান হুমকি কিন্তু এটিই একমাত্র হুমকি নয়। তেল ও গ্যাস কারখানাগুলোর নজর গিয়ে পড়েছে এখন মেরু অঞ্চলের ওপর। আর তেল অনুসন্ধানজনিত কাজের দরুন এটি একটি সম্ভাব্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তেলের সংস্পর্শে শ্বেত ভাল্লুকের পশমের ইনসুলেটিং প্রতিক্রিয়া ব্যাহত হয়। এতে এদের শরীর পর্যাপ্ত উষ্ণ হতে পারে না। আবার এ তেল এদের পাকস্থলিতে চলে গেলে বিষক্রিয়া ঘটে থাকে। আবার এদের শিকারের মাধ্যমে আগত কীটনাশক এদের শরিরে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে আর এতে করে এদের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শ্বেত ভাল্লুক ও মানুষের মধ্যে সংঘাত ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ক্ষুধার্ত শ্বেত ভাল্লুক লোকালয়ে এসে খাদ্য অনুসন্ধান করে গ্রীষ্মকালে। সৌভাগ্যবশত মানুষেরা শ্বেত ভাল্লুকের উপস্থিতিতে নিজেদের খাপ খাওয়াতে শিখে গেছে এবং স্বেত ভাল্লুকের সাথে সংঘাত এড়ানোর কৌশল শিখে গিয়েছে।
৭। গ্রিজলি ও শ্বেত ভাল্লুকের সঙ্করের সতিই অস্তিত্ব রয়েছে
সাম্প্রতিক ২০০৬ সালের জেনেটিক টেস্টিং দ্বারা এটি নিশ্চিত হয়েছে যে শ্বেত ভাল্লুক ও গ্রিজলি ভাল্লুকের সঙ্কর প্রজাতির সত্যিই অস্তিত্ব রয়েছে। এগুলো যথাক্রমে 'গোলার বিয়ার' বা 'পিজলি বিয়ার' নামে পরিচিত। এই হাইব্রিড প্রজাতিগুলো শারীরিকভাবে উভয় প্রজাতির বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। তবে যেহেতু সাধারণত মা শ্বেত ভাল্লুক বন্য সঙ্কর প্রজাতিগুলো প্রসব করে তাই সঙ্কর শাবকগুলো শ্বেত ভাল্লুকের ন্যায় বেড়ে ওঠে ও তাদের মতই আচরণ করে থাকে। তবে এ ব্যাপারটি মোটেও অবাক করার মত নয় যখন আপনি জানবেন যে শ্বেত ভাল্লুকেরা প্রায় ১৫০০০০ বছর পূর্বে গ্রিজলি ভাল্লুক থেকেই বিবর্তিত হয়েছিল।
৮। শ্বেত ভাল্লুকের প্রায় ১৯ ধরনের উপপ্রজাতি রয়েছে
বন্য শ্বেত ভাল্লুকের সংখ্যা সবমিলে প্রায় ২৬ হাজারের কাছাকাছি। এগুলো আবার ১৯ টি ইউনিটে উপপ্রজাতি অনুযায়ী বিভক্ত। এগুলোর মধ্যে কেবল্মাত্র ১ টি উপপ্রজাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে আর ৫ টি উপপ্রজাতির সংখ্যার কোনও পরিবর্তন হয়নি, ৪ টি উপপ্রজাতির সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে, আর বাদবাকি ৯ টি উপপ্রজাতির সঠিক সংখ্যা উপাত্তের ঘাটতির দরুন নিরধারন করা সম্ভব হয়নি। আমাদের কাছে এখনো যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত নেই যে এই উপপ্রজাতিগুলো বর্তমানে ঠিক কি অবস্থায় আছে।
৯। পুরুষ শ্বেত ভাল্লুকের ওজন ১০ টি পুরুষ মানুষের ওজনের সমান হয়ে থাকে
পূর্ণবয়স্ক পুরুষ শ্বেত ভাল্লুক ওজনে প্রায় ৮০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এরা স্ত্রি ভাল্লুকদের তুলনায় দ্বিগুন সাইজের হয়। প্রায় তিন মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট পুরুষ শ্বেত ভাল্লুকরা পৃথিবীর বৃহত্তম স্থলচর মাংসাশী প্রাণী।
১০। এরা এক কিলোমিটার দুরত্ব থেকেই এদের শিকারের গন্ধ টের পায়
শ্বেত ভাল্লুকের রয়েছে অত্যন্ত শক্তিশালী ও সংবেদনশীল ঘ্রানশক্তি। প্রখর ঘ্রানশক্তি থাকার ফলে এরা বরফের মধ্যে অবস্থিত সীলের শ্বাস নেয়ার গর্ত অনায়াসেই খুঁজে নিতে পারে। সীলের গর্ত খুঁজে পাওয়া মাত্রই শ্বেত ভাল্লুক ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে থাকে। যখনি সীল শ্বাস নিতে গর্তের কাছাকাছি আসে তখনি এরা ঝাঁপ দিয়ে আক্রমণ চালায়। এমনকি এরা কয়েক মিটার পুরু বরফের আস্তরণের নিচে লুকিয়ে থাকা সীলের গন্ধও সহজেই আন্দাজ করতে পারে।