পুঁয়ে সাপ - বিষধর নয় বিপদজনকও নয়

 

পুঁয়ে সাপ (Ramphotyphlops braminus) একটি অত্যন্ত সাধারণ নির্বিষ সাপ যেটি পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই এবং সর্বত্রই দেখা যায়। লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে যে এই সাপ বিষধর ও মারাত্মক। যেমন বাংলাদেশে মনে করা হয় এই সাপ বিষাক্ত। তাই দেখা মাত্রই মেরে ফেলা হয় সাপটিকে। 

পুঁয়ে সাপ দেখতে কালো কেঁচোর মত। এটিকে অনেকে দুমুখো সাপও বলে থাকে। কারণ মাথা আর লেজ দেখতে প্রায় একই রকম। এদের ক্ষুদ্র শরীরে রয়েছে বেশ শক্তি যা সাপটিকে তুললেই বোঝা যায়। এ সাপটিকে সাধারণত মাটির নিচে কিংবা ফুলের টবে দেখা যায়। অনেক সময় মেঝের ফাটলের ভেতরেও দেখা যায় এদের।

 

 

 

সাপটি সাধারণত লম্বায় ৬ ইঞ্চির মত হয়ে থাকে। সমগ্র বাংলাদেশে দেখা যায় এবং এটি দক্ষিণ এশিয়ার স্থানীয় সাপ। সাপটি মাটির নিচে বসবাস করে। ভীষণ লাজুক স্বভাবের হয়ে থাকে। খুব সহজেই এরা পাখি, গুইসাপ ও অন্যান্য সাপের শিকারে পরিণত হতে পারে। রেড টেইলড পাইপ স্নেক প্রায়শই এদের শিকার করে থাকে। 

 

এই অন্ধ সাপটির রয়েছে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দুটি চোখ। চোখদুটি পাতলা পর্দা দ্বারা আবৃত থাকে যেটি এদের গর্তের মাটি থেকে চোখকে রক্ষা করে। 

 

 

 

অনেক মানুষের বাসায় এই ক্ষুদ্র কালো বর্ণের সাপটি পাইপের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে। সাপটি মানুষের জন্য একেবারেই ক্ষতিকর নয় কিন্তু তা সত্ত্বেও গুজব রয়েছে যে সাপটি বিষাক্ত আর এক কামড়েই মানুষকে মেরে ফেলে। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা। এ সাপটি দেখলে কখনোই মেরে ফেলা উচিত নয়। পুঁয়ে সাপ বরং পরিবেশের জন্য উপকারী। এরা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে ভুমিকা রাখে। এরা সাধারণত পিঁপড়ে ও উঁইপোকার ডিম খেয়ে থাকে।

 

সাপটিকে ধরতে গেলে শরীর উল্টে পাল্টে লাফালাফি করে এবং পালানোর চেষ্টা করে। মানুষকে দংশন করার ক্ষেত্রে এদের মুখটি নিতান্তই ক্ষুদ্র। তাই এরা কখনোই মানুষকে কামড়াতে চেষ্টা করে না। 

 

পুঁয়ে সাপের একটি মজার ব্যাপার হল এরা সবাই স্ত্রী হয়েই জন্মায় আর প্রজাতির বংশধারা অব্যাহত রাখতে কোনও পুরুষ সাপের প্রয়োজন হয় না। তাই এরা পার্থোজেনেটিক। যৌন পরিপক্কতায় পৌঁছালে এরা উর্বর ডিম পাড়ে। আর এবাবেই এরা বংশানুক্রমিক ধারা অব্যাহত রাখে। একটি পুঁয়ে সাপ থাকলেই পরবর্তীতে  সেখান থেকে আরো অনেক সাপ জন্ম নিবে।